1 প্রশ্ন:- রোযার নিয়ত কি..? কিভাবে করব..? এবং রোযার নিয়ত কখন করব..??
প্রশ্ন:- রোযার নিয়ত কি..? কিভাবে করব..?
উত্তর :- রোযার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ:- সংকল্প,ইচ্ছা । যেমন:-মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকালের রোজা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়।
সহিহ বোখারি : ১/২
বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৬
রোযার নিয়ত যখন ফরজ, রোযার নিয়ত রাতেই করা উত্তম।
সুনানে আবি দাউদ : ১/৩৩৩
বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯
নিয়ত করে পানাহার ও স্ত্রী-মিলনরাতে রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। (সুরা বাকারা : ১৮৭)
নিয়ত কি আরবীতে করতে হবে..??
নিয়ত আরবীতেই করতে হবে এমন কোন গুরুত্বই নেই। অনেকে মনে করে আরবীতেই নিয়ত করতে হবে। না হয় রোযা হবে না।
রোযার জন্য নিয়ত করা শর্ত। নিয়ত ছাড়া রোযা হবে না। সেই নিয়ত মুখেই বলতে হবে, বা আরবীতেই করতে হবে এমন কোন শর্ত নেই।
মনে মনে নিয়ত করলেই রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে মুখেও নিয়ত করা যায়।
কিন্তু নিয়ত ছাড়া রোযা হবে না। আর সাধারণ মানুষ মুখে নিয়ত না করার কথা বললে অনেক সময় বেখেয়ালে নিয়ত ছাড়াই রোযা শুরু করে দেয়। এ কারণে অনেক উলামাগণ মুখে নিয়ত করতে বলেছেন। জরুরী হিসেবে নয়। বরং নিয়ত ছুটে যাওয়া থেকে বাঁচার জন্য।
কিন্তু আরবীতে নিয়ত করাকে জরুরী মনে করলে তা বিদআত হবে। কারণ, আরবীতেই নিয়ত করার কোন বাধ্যবাধকতা কোরআন, হাদিস ওফিক্বহের কিতাবে আসেনি।
নিয়ত একত্রে করা যথেষ্ট নয়। পুরো রমাদানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ, প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি।
সহিহ বোখারি : ১/২
ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৯৫
عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى المِنْبَرِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا، أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ» (صحيح البخارى، رقم-1)
وَقَدْ أَجْمَعَ الْعُلَمَاءُ عَلَى أَنَّهُ لَوْ نَوَى بِقَلْبِهِ وَلَمْ يَتَكَلَّمْ فَإِنَّهُ يَجُوزُ كَمَا حَكَاهُ غَيْرُ وَاحِدٍ
وفيه ايضا: وَقَدْ اخْتَلَفَ كَلَامُ الْمَشَايِخِ فِي التَّلَفُّظِ بِاللِّسَانِ فَذَكَرَهُ فِي مُنْيَةِ الْمُصَلِّي أَنَّهُ مُسْتَحَبٌّ وَهُوَ الْمُخْتَارُ وَصَحَّحَهُ فِي الْمُجْتَبَى وَفِي الْهِدَايَةِ وَالْكَافِي وَالتَّبْيِينِ أَنَّهُ يَحْسُنُ لِاجْتِمَاعِ عَزِيمَتِهِ وَفِي الِاخْتِيَارِ مَعْزِيًّا إلَى مُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ أَنَّهُ سُنَّةٌ وَهَكَذَا فِي الْمُحِيطِ وَالْبَدَائِعِ وَفِي الْقُنْيَةِ أَنَّهُ بِدْعَةٌ إلَّا أَنْ لَا يُمْكِنَهُ إقَامَتُهَا فِي الْقَلْبِ إلَّا بِإِجْرَائِهَا عَلَى اللِّسَانِ فَحِينَئِذٍ يُبَاحُ وَنُقِلَ عَنْ بَعْضِهِمْ أَنَّ السُّنَّةَ الِاقْتِصَارُ عَلَى نِيَّةِ الْقَلْبِ، فَإِنْ عَبَّرَ عَنْهُ بِلِسَانِهِ جَازَ وَنُقِلَ فِي شَرْحِ الْمُنْيَةِ عَنْوَلَا بَعْضِهِمْ الْكَرَاهَةُ وَظَاهِرُ مَا فِي فَتْحِ الْقَدِيرِ اخْتِيَارُ أَنَّهُ بِدْعَةٌ فَإِنَّهُ قَالَ: قَالَ بَعْضُ الْحُفَّاظِ: لَمْ يَثْبُتْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مِنْ طَرِيقٍ صَحِيحٍ وَلَا ضَعِيفٍ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ عِنْدَ الِافْتِتَاحِ أُصَلِّي كَذَا وَلَا عَنْ أَحَدٍ مِنْ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ بَلْ الْمَنْقُولُ أَنَّهُ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – «كَانَ إذَا قَامَ إلَى الصَّلَاةِ كَبَّرَ» وَهَذِهِ بِدْعَةٌ. اهـ.
وَقَدْ يُفْهَمُ مِنْ قَوْلِ الْمُصَنِّفِ لِاجْتِمَاعِ عَزِيمَتِهِ أَنَّهُ لَا يَحْسُنُ لِغَيْرِ هَذَا الْقَصْدِ وَهَذَا لِأَنَّ الْإِنْسَانَ قَدْ يَغْلِبُ عَلَيْهِ تَفَرُّقُ خَاطِرِهِ فَإِذَا ذَكَرَ بِلِسَانِهِ كَانَ عَوْنًا عَلَى جَمْعِهِ، ثُمَّ رَأَيْته فِي التَّجْنِيسِ قَالَ وَالنِّيَّةُ بِالْقَلْبِ؛ لِأَنَّهُ عَمَلُهُ وَالتَّكَلُّمُ لَا مُعْتَبَرَ بِهِ وَمَنْ اخْتَارَهُ اخْتَارَهُ لِتَجْتَمِعَ عَزِيمَتُهُ. (البحر الرائق، كتاب الصلاة، باب شروط الصلاة-1/483-484
প্রশ্ন:- রমাদানের রোযার নিয়ত কখন শুরু - শেষ..??
উত্তর :-ক)রোযার নিয়তের সময় শুরু :- নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন-বুধবারের রোজার নিয়ত মঙ্গলবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। সোমবার সূর্যাস্তের আগে মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদিসে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে।
আল মুহিতুল বোরহানি : ৩/৩৪৩
রদ্দুল মুহতার : ২/৩৭৭
খ) রোযার নিয়তের শেষ সময়:-
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হল রোযা রাখার সময়সীমা। ফরজ রোযার নিয়ত করার সময়সীমা হল, দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত। অর্থাৎ দিনের মধ্যভাগের আগ পর্যন্ত নিয়ত করলে তা শুদ্ধ হবে।
ধর্তব্য যে, আরবী দিনের সূচনা হয় সুবহে সাদিক থেকে। তাই সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যতটুকু সময় হয়, এর মাঝামাঝি সময়ের আগে রোযার নিয়ত করলেই রোযা রাখা শুদ্ধ হবে।
যেমন যদি সেহরীর সময় তথা সুবহে সাদিক শুরু হয় ৫টায়। আর সূর্যাস্ত হয়ে থাকে সন্ধ্যা ৭টায়। তাহলে একদিন হচ্ছে কত ঘন্টায়?
১৪ঘন্টায়।
সুতরাং সুবহে সাদিক থেকে ৭ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রোযার নিয়ত করলেই রোযা রাখা শুদ্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ উক্ত হিসাব মতে দুপুর ১২টার আগে রোযার নিয়ত করলে সেদিনের রোযা রাখা শুদ্ধ হবে। যদি এর পর নিয়ত করে তাহলে শুদ্ধ হবে না।
جاز صوم رمضان، والنذر المعين، والنفل بنية ذلك اليوم أو بنية مطلق الصوم أو بنية النفل من الليل إلى ما قبل نصف النهار، (الفتاوى الهندية، كتاب الصوم، الباب الأول في تعريفه وتقسيمه وسببه ووقته وشرطه -1/195
ধারাবাহিক ভাবে চলবে..............
والله اعلم بالصواب
উত্তর প্রধানে :- ম. ইউসুফ বিন রেনু।